শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

NewsFile Institute
Home / Big Picture Stories  / বসন্ত উৎসব ও দোল পূর্ণিমা

বসন্ত উৎসব ও দোল পূর্ণিমা

ভারতীয় হিন্দু পুরাণে বসন্ত উৎসব ও দোলপূর্ণিমার বিশেষ তাৎপর্যের দিক আমরা দেখতে পাই। ভাগবত ও অন্যান্য পুরাণে এনিয়ে নানা গল্প রয়েছে।

আশুতোষ দাস

জীবনকে রাঙিয়ে দিতে কেনা চায়। সেই স্বপ্নময় জীবনের বার্তা নিয়ে আসে বসন্ত উৎসব বা দোল পূর্ণিমা – রঙের উৎসব। এবার ১৪ চৈত্র বা ২৮ মার্চ, শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা, শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি। এদিন থেকেই হোলি উৎসব ও শান্তিনিকেতনের মেলা আরম্ভ হয়। বর্তমানে এই উৎসব দেশে বিদেশে নানা জাতির মধ্যে বিভিন্ন রূপে পালন হয় । হোলি অর্থের বাখ্যা অনেকভাবে রয়েছে। কেউ কেউ তার অর্থ আগাম ফসল তোলার ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা বুঝায় বলেও ব্যাখা করেছেন। এনিয়ে যতই দ্বন্দ্ব থাকুক না কেন, এটা এখন একটি আন্তর্জাতিক উৎসবের রূপ নিয়েছে। আজকের সময়ে ভেদাভেদ, জাতপাতের বিরুদ্ধে রঙ মেখে সবাই সমান। এই বোধ চেতনা বিস্তার করতে কোনও কোনও জায়গায় উৎসবের গভীর তাৎপর্যের মাহাত্ম্য নিয়ে পালিত হচ্ছে।

ভারতীয় হিন্দু পুরাণে বসন্ত উৎসব ও দোলপূর্ণিমার বিশেষ তাৎপর্যের দিক আমরা দেখতে পাই। ভাগবত ও অন্যান্য পুরাণে এনিয়ে নানা গল্প রয়েছে। দোল উৎসবকে নানা নামে অভিহিত করা রয়েছে। কেউ কেউ এটাকে ফাল্গুনী উৎসব বলে থাকেন। ভারতবর্ষ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে প্রতি বৎসর চৈত্র মাসের পূর্ণিমাতে
হোলি উৎসব পালিত হয়। লোকপুরাণের মতে, হিরণ্য কশিপুর অত্যাচারী রাজা ছিলেন। তিনি নিজেকে ভগবানের সমকক্ষ বলে ভাবতেন। তার পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর উপাসক। রাজা অর্থাৎ তার পিতৃদেব হিরণ্য নিজেকে সর্বশক্তিমান ভাবলে প্রহ্লাদ বললেন কেবল বিষ্ণু তার উপাস্য, সর্বনিয়ান্তা সেইই, একথা শোনে হিরণ্য রেগে
নানা ভাবে প্রহ্লাদকে নিপীড়ন করতে থাকেন। কিন্তু যখন তাতেও দমাতে পারেননি তখন ঐশ্বরিক বল প্রাপ্ত অগ্নিদেবের আর্শীবাদ ধন্য তারই মায়াবী বোন হোলিকা রাক্ষসীকে প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে অগ্নিদগ্ধ করে মারতে পাঠান হিরন্য। কিন্তু এতো মায়াবী গুণ থাকা সত্বেও হোলিকা নিজেই প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে নিজেই ভষ্ম হয়ে যায়। হোলিকার কোলে বসে প্রহ্লাদ তার ইষ্টদেবতা বিষ্ণুর জপ করে তাই তার কিচ্ছু হয়নি। সেই ঘটনা থেকেই হোলি উৎসবের আরম্ভ, অর্থাৎ অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ জয়ের সূচক হিসেবে সেই আদি কাল থেকে খ্যাত হয়ে আছে। কোন কোন জায়গায় দোলপূর্ণিমার আগের দিন খড়কুটো জড়োকরে হোলিকা দহন উৎসব হতেও দেখা হয়।

রাধাকৃষ্ণের প্রেমের প্রতিভূ হিসেবে এই দোলপূর্ণিমার দিনকে ধরাহয়। চৈত্রপূর্ণিমায় গোপীগনের সঙ্গে লীলারসে বৃন্দাবনে আনন্দ উচ্ছ্বাস ও রঙে মেতেছিলেন রাধাকৃষ্ণ ও গোপীগন। আবার বৈষ্ণবসিদ্ধাচার্যগন গৌরপূর্ণিমা বলে এদিনটিকে মান্যতা দেন। কারণ প্রেমের অবতার মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের জন্মতিথিও ওইদিন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অন্য এক মাত্রায় দোলপূর্ণিমাকে কাব্য সাহিত্যে শিল্পরুপ দিয়েছেন। শান্তিনিকেতনে ওইদিন বসন্ত উৎসব আরম্ভ হতে দেখা যায়। আবার অনেক গৃহস্থ বাড়িতে গোপাল কৃষ্ণের ভোগ-আরতি, পূজা অর্চ্চনা করা হয়। অনেক মঠ-আঁখড়ায় রাধাকৃষ্ণের পূজা এবং নরনায়ণ সেবা হতেও দেখা যায়। কবি, শিল্পী, গায়ক এই পূণ্য দিনে তাদের সৃজনী কাজ পাঠক, দর্শক, জনগনের কাছে তোলে ধরেন। বইপ্রকাশ, ভাগবত পাঠ ইত্যাদি নানা গ্রন্থপাঠ ও ভক্তদের শ্রবণ করতে দেখা যায়। মানুষ রঙ আর স্বপ্নের ভেতর বেঁচে থাকে, সমস্ত সমস্যার ভেতরও মানুষেরা জীবনের সত্যতা খুঁজে মানুষ রঙ মেখে বাঁচতে চায়। তাই এই দোলপূর্নিমার বসন্তের উৎসবকে রঙের উৎসবও কেউ কেউ বলে থাকেন।